ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) - আমের চাষ অনুশীলন

প্রাসঙ্গিক তথ্য

আমের বংশ বিস্তার দু'ভাবে হয়ে থাকে। যেমন-

ক) বীজ দ্বারা ও খ) কলমের সাহায্যে

বীজ দ্বারা বংশবিস্তার করা হলে তাতে মাতৃ গাছের গুণাগুণ বজায় থাকে না। তাই আমের গুণাগুণ ঠিক রাখার জন্য কলমের সাহায্যে অর্থাৎ অঙ্গজ বংশ বিস্তারের মাধ্যমে চাষাবাদ করা উত্তম। ভালো জাতের চারা নির্বাচন-আমাদের উপ-মহাদেশে প্রায় এক হাজার জাতের আম চাষ করা হয়। তন্মধ্যে বাংলাদেশে প্রচলিত কয়েকটি ভালো জাতের আমের নাম উল্লেখ করা হলো। ল্যাংড়া, গোপালভাগ, খিরসাপাত, মহানন্দা, কিষাণভাগে, মিসরীভাগে, কোহিতুর, হিমসাগর, আম্রপালি ইত্যাদি আগাম জাত। ফজলী, আশ্বিনা, চৌসা, কুয়াপাহাড়ী ইত্যাদি নাৰীজাত। এছাড়া প্রত্যেক এলাকার কিছু স্থানীয় ভালো জাতের আম পাওয়া যায় ।

উপকরণ

১। বীজ বা কলম ২। সার (জৈব-রাসায়নিক) ৩। ছত্রাক নাশক ও কীটনাশক ৫। প্রেয়ার ও লাঙ্গল ও জোয়াল ৭। কোদাল ৮। মই ও মুখর। খুরপি ১০। পলিথিন ফিতা ১১। সিকেচার ১২। ঝুড়ি ১৩। রশি ১৪ । খুঁটি ১৫। জুনিং 'স' ১৬। খাঁচা ১৭। বাবারি ১৮। সিরিঞ্জ ১৯ । তুলা ২০। আলকাতরা / কেরসিন ২১ । বদন ২২। নিড়ানি ।

কাজের ধাপ

১। স্থানীয় আবহাওয়ার উপযোগী আমের উন্নত জাত নির্বাচন করতে হবে । প্রয়োজনীয় কলম বা চারা সংগ্রহ করতে হবে । প্রতি একরে ৩৫ টি কলম/চারা লাগবে (বর্গাকার পদ্ধতি, দূরত্ব ১২ মিটার) 

২। আম চাষের জন্য উঁচু স্থান এবং সুনিষ্কাশিত গভীর দো-আঁশ মাটি নির্বাচন করতে হবে । 

৩ । উন্নত জাতের সায়ন গাছ হতে ভিনিয়ার কলমের মাধ্যমে কলম তৈরি করতে হবে বা সংগ্রহ করতে হবে । কলম তৈরির জন্য তত্ত্বীয় অংশ অনুসরণ করতে হবে। 

৪ । জমি লাঙল দিয়ে ৩-৪ টি চাষ দিতে হবে। মুগুর দিয়ে মাটির ঢেলা ভেঙে দিতে হবে । আগাছা বাছতে হবে। 

৫ । জমিতে বর্গাকার পদ্ধতিতে ১২ মি. দূরত্ব (কলমের চারার জন্য) কোদাল দিয়ে ৭৫ সে. মি. x ১ মি. ১ মি. গভীর ৩৫ টি গর্ত করতে হবে । গর্ত ১ সপ্তাহ খোলা রাখার পর তত্ত্বীয় অংশে বর্ণিত পরিমাণ সার দিতে হবে । গর্ত ভরাটের সময় উপরের মাটি নিচে ও নিচের মাটি উপরে দিতে হবে। এর ১০-১৫ দিন পর বিকেল বেলা কলম চারা রোপণ করতে হবে । 

৬ । যদি টবে উৎপাদিত কলমের চারা রোপণের প্রয়োজন হয় তবে প্রথমে টবের চারধারে ও নিচে আস্তে আস্তে আঘাত করতে হবে । টবটিকে চারা সমেত উল্টো করে চারার গোড়া দু আঙ্গুলের ফাঁকে চারাটিকে আটকিয়ে নিতে হবে । তারপর টবের কিনারা কোন খুঁটির সাথে আস্তে আস্তে আঘাত করতে হবে যেন চারাসহ সম্পূর্ণ মাটির বল খুলে আসে। এই প্রক্রিয়াকে “ডি পটিং” বলে। সাবধানে চারা বের করে চারাটি টবে যে পরিমাণ মাটির নিচে ছিলো ঠিক ততটুকুই চারার গর্তে পুঁতে দিতে হবে। তারপর চারধারে হাতে চেপে মাটি বসিয়ে, খুঁটি পুঁতে ও খাচা দিয়ে চারাকে ঘিরে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। রোপণের পর ৫-৭ দিন ঝাঁঝরি দিয়ে পানি দিতে হবে । 

৭ । গাছের গোড়ায় আগাছা হলে নিড়িয়ে দিতে হবে। সেচের পর জো এলে চটা ভেঙে মাটি আলগা ও নরম রাখতে হবে । বয়স্ক গাছে বর্ষার আগে ও পরে গোড়ার মাটি কুপিয়ে বা লাঙল দিয়ে আলগা করতে হবে।

৮ । চারা রোপণের পর সার প্রয়োগ করতে হবে। সারের মাত্রা তত্ত্বীয় অংশের বর্ণনা অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে। 

৯ । সার প্রয়োগের নিয়ম হলো; ঠিক দুপুরের বেলা যে পরিমাণ স্থানে গাছের ছায়া পড়ে সে অংশ পর্যন্ত কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করে সার প্রয়াগ করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। গাছের গোড়ার চারদিকে (৩০-১০০ ২-৩ সপ্তাহ পর পর সেচ দিতে হবে । তবে গাছে মুকুল আসার আগে সেচ দেয়া যাবেনা । এতে করে মুকুল না এসে নতুন পাতা বের হয়ে যাবে । গাছের ফল মটর দানার আকৃতি হলে ৮-১০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে । বর্ষায় নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে । সে.মি. জাত ভেদে) কিছু জায়গা বাদ রেখে সার প্রয়োগ করতে হয় । 

১০। গাছে বেসিন বা থালা পদ্ধতিতে সেচ দিতে হবে । চারা গাছে প্রথম বছর শুকনো মৌসুমে ৮-১০ দিন পর পর এবং দ্বিতীয় বছর থেকে পঞ্চম বছরে 

১১ । কলমের চারা রোপণের পর ৩-৫ বৎসর পর্যন্ত মুকুল এলে ছিড়ে ফেলতে হবে। এতে গাছের বৃদ্ধি পরিপূর্ণ হবে এবং পরবর্তীতে ফলন ভাল হবে । গাছের গোড়া থেকে ২ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত সকল শাখা প্রশাখা ছেটে ফেলতে হবে এবং ৪-৫ টি সতেজ ও চারদিকে প্রসারিত শাখা রেখে বাকীগুলো প্রুনিং করতে হবে । মরা ও রোগাক্রান্ত ডাল ও কলমের জোড়ের নিচ থেকে বের হওয়া ডালপালা সিকেচার দিয়ে প্রুনিং করতে হবে । 

১২ । গাছে পোকামাকড় ও রোগ বালাই দমনে তত্ত্বীয় অংশে বর্ণিত ব্যবস্থাবলি গ্রহন করতে হবে ।

১৩। আম সংগ্রহ করতে বাঁশের আগায় জালি বেঁধে পরিপক্ক আম পেড়ে আনতে হবে। আম পাড়ার পর আঘাতপ্রাপ্ত, কাটা, পোকাধরা, পচাফল বাছাই করতে হবে। আকার অনুসারে বড়, মাঝারি ও ছোট ফল গ্রেডিং করতে হবে। দূরে পাঠাতে বা বাজারজাতের জন্য কেবল মাত্র ফলের গায়ে রং এসেছে এরূপ আম সংগ্রহ করতে হবে । সংগৃহীত আম বাঁশের খাচা বা কাঠের বাক্সে খড়ের মধ্যে প্যাকিং করে প্রেরন করতে হবে ।

সতর্কতা

১। শীতের প্রথমভাগে সেচ দিলে ফুল না গজিয়ে, গাছে পাতা গজাতে পারে । 

২। গাছে ফুল ফোটা থেকে শুরু করে মটর দানার মত গুটি হওয়ার সময়সীমার মধ্যে সেচ দেওয়া যাবেনা । 

৩। ফল করা বন্ধ করতে সেচ দিয়ে এবং পানাফিক্স হরমোন (২-৩ মিলি ১০ লি: পানিতে) ১-৩ সপ্তাহ পর পর প্রে করে উপকার পাওয়া যায় ।

Content added By
Promotion